, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ , ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


পুলিশের সহযোগিতায় মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোঁজ যুবক খুঁজে পেল পরিবার

  • আপলোড সময় : ০৫-০৫-২০২৩ ০৫:৩৩:১৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৫-২০২৩ ০৫:৩৩:১৬ অপরাহ্ন
পুলিশের সহযোগিতায় মানসিক ভারসাম্যহীন নিখোঁজ যুবক খুঁজে পেল পরিবার
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল-নরসিংদী  বাইপাস সড়ক সংলগ্ন একটি বন্ধ হোটেলের সামনে ঘুমন্ত পড়ে ছিল আহত (মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত) অজ্ঞাত (২৩) এক যুবক। রাস্তায় চলাফেরা করতে অনেকের চোখ আটকে যাচ্ছে পড়ে থাকা ঐ অজ্ঞাত যুবকের দিকে। পরে এ অবস্থায় তাকে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন এক পথচারী। 

কিছুক্ষণ পর কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থলে যান।  তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় পুলিশ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি নিজের নাম ও একটি মোবাইল নম্বর দিতে সক্ষম হলেও বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি। পরে তার দেয়া মোবাইল নম্বরে পুলিশ ফোন করে জানতে পারে দুই মাস পূর্বে সিলেট শহর থেকে নিখোঁজ হয়েছিল মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক সজল আহমেদ (২৩)। বৃহস্পতিবার (০৪ মে) দিনভর পুলিশ পাহারায় ও সহায়তায় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওইদিন রাতেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় সজলকে।

শুক্রবার (০৫ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম। সজল আহমেদ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের নশু মিয়ার ছেলে। তিনি তার বড় ভাইয়ের সঙ্গে সিলেট শহরের কাজীটোলার মক্তবগলি এলাকায় বসবাস করেন।

সজলের পরিবারের বরাত দিয়ে এসআই জানান, সজল কিছুদিন মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। পরবর্তীতে তিনি বিগত প্রায় পাঁচ বছর তার বড় ভাই সজীব আহমেদের সঙ্গে বসবাস করে সিলেট বন্দর বাজার মহাজন পট্টি এলাকায় একটি পাওয়ার টুলসের দোকানে চাকরি করতো। প্রায় পাঁচ ছয়-মাস আগে তার চলাফেরা ও কথাবার্তায় অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। পরে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানা যায় সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। এরপর থেকে চাকরি ছেড়ে তিনি বাসায় থেকেই মানসিক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলো। গত ৭ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে তিনি আর ফেরেনি। এরপর তাকে খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি), এলাকায় মাইকিং এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করেও তার কোন সন্ধান পায়নি পরিবার।

এসআই আরো বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় মহা সড়কের পাশে পড়ে আছে ওই যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এসময় তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তার নিজের নাম সজল বলে জানালেও বিস্তারিত বলতে পারেনি। এর কিছুক্ষণ পর তিনি কয়েকটি মোবাইল নম্বর বলতে পারলেও কনফার্ম করতে পারেনি। ধারণা করে ওই নম্বরে কল দিলে সজীব নামে এক ব্যক্তি রিসিভ করলে তাকে সজল নামের এক জনের সন্ধান জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে তার ছবি পাঠানো হয়। পরে তিনি নিশ্চিত করেন ওই যুবক তার নিখোঁজ ভাই সজল। পরে গতকাল সন্ধ্যায় সিলেট থেকে তার ভাই ও স্বজনরা এলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের কাছে সজলকে হস্তান্তর করা হয়।

সজলের বড় ভাই সজীব আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমার মোবাইলে ফোন করেন কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম। তিনি আমাকে জানান সজল নামে একজনকে আহতাবস্থায় কালীগঞ্জে পাওয়া গেছে। প্রথমে এই কথা বিশ্বাসই হচ্ছিল না। পরে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ছবি দেখে আমি নিশ্চিত হই আহত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিটি আমার নিখোঁজ ভাই সজল । পরে সিলেট থেকে রওনা হয়ে সন্ধ্যার পর কালীগঞ্জ থানায় পৌঁছাই। পুলিশের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সজলকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পর ভাইকে খুঁজে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আরমান বলেন, প্রতিদিনের মত গতকাল সকালে কালীগঞ্জ থানায় খবর নিতে যাই, কোন ঘটনা ও ঘটনা আছে কিনা? এ সময় কালীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুল ইসলাম জানান কালীগঞ্জ -ঘোড়াশাল -নরসিংদী বাইপাস সড়কের বালীগাঁও নামকস্থানে অজ্ঞাত এক যুবক পড়ে আছে। আর এই খবরটি ৯৯৯-এ ফোন করে এক পথচারী জানান। খাবার পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে চলে যাই সেখানে গিয়ে দেখি কালীগঞ্জ থানার এসআই সাইফুল ইসলাম ওই যুবকটিকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছেন। তড়িৎ গতিতে পুলিশের এই কাজটিকে তিনি সাধুবাদ জানান।